জল দাও ভোট নাও - পানীয় জলের হাহাকার : ভোট বয়কটের পথে আদিবাসীরা

8th April 2021 11:20 pm বর্ধমান
জল দাও ভোট নাও - পানীয় জলের হাহাকার : ভোট বয়কটের পথে আদিবাসীরা


আমিরুল ইসলাম ( ভাতার ) :  বাড়ি বাড়ি সজল ধারা প্রকল্পের সংযোগ দেওয়া হলেও মেলেনা জল ।এমনকি গ্রামে  পঞ্চায়েতের বসানো কল থাকলেও তার থেকে জল ওঠে না।এমন পরিস্থিতির কারণে সারা বছরই জল সংকটের মধ্যে দিন কাটাতে হয়   পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের সাহেবগঞ্জ হলদি গোরে আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দাদের।এখন গ্রীষ্মে আদিবাসী পাড়ায় জল সংকট আরও তীব্র আকার নিয়েছে নেতা,নেত্রী,জনপ্রতিনিধি সবাইকে জল সংকটের কথা জানিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু সুরাহার কোন ব্যবস্থা আজ অবধি হয়নি।তারই পরিপ্রেক্ষিতে  সাহেবগঞ্জ আদিবাসী পাড়ার মহিলারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জল সংকট সমাধানের ব্যবস্থা না হলে তারা কেউ ভোট দিতে যাবেন না। ৭০ ঘর আদিবাসী পরিবারের প্রায় ২০০ মহিলা ভোটার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কার্যতই  বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছেন শাসক-বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা । 


ভাতার বিধানসভার অন্তর্গত সাহেবগঞ্জ ১
পাঞ্চায়েত এলাকার অধীনে রয়েছে সাহেবগঞ্জ 
হলদি গোরে আদিবাসী পাড়া ।এই পাড়ায় বসবাস করেন প্রায় ৭০ ঘর আদিবাসী পরিবার।তাঁদের কেউ ক্ষেত মজুরী করে  আবার কেউ জনমজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করেন । জল সংকটের কারণে জেরবার অবস্থা গোটা পাড়ার বাসিন্দাদের ।এখন গরমে জলসংকট আরও তীব্র আকার নিয়েছে।জল পেতে এখন গ্রামবাসীদের ভরসা ডিভিসি ক্যানেলের আন্ডারপাশের নিচ দিয়ে যাওয়া সজলধারার পাইপ লাইন। সকাল থেকে সেখানেই হাঁড়ি ,বালতি ,কলসি নিয়ে ভেটের লাইনের মতো সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন আদিবাসী পাড়ার সব বয়সী  মহিলারা । একে একে তাঁরা ক্যানেলের আন্ডারপাশের নিচের পাইপ লাইন দিসে আসা জল সংগ্রহ করেন। বৃহস্পতিবার ওই ক্যানেলের আন্ডারপাশের কাছে পৌছে দেখােগেল জল নেওয়ার জন্য বহু মহিলা একই রকম ভাবে সেখানে লাইন দিয়েছেন । 

 
ক্যানেলের আন্ডারপাশের নিচে দিয়ে যাওয়া সজলধারার পাইপ লাইন থেকে এইভাবে কেন আপনাদের লাইন দিয়ে জল নিতে হচ্ছে ? এই প্রশ্নের উত্তরে গ্রামের বধূ লক্ষী মাড্ডি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,“ এই লাইন আশলে  হল জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার লাইন।এই লাইনই হল,জীবনটা বাঁচিয়ে রাখার পানীয় জলের লাইন। এই লাইন হল,পরিবারকে টিকিয়ে রাখার লাইন।এই লাইন হল,জল না পেয়ে রেগে যাওয়া স্বামীর মারের হাত থেকে বধূদের ও মহিলাদের বাঁচার লাইন ”। মহিলারা বলেন ,তাঁদের আদিবাসী পাড়ায় পঞ্চায়েতের কল থাকলেও তার থেকে  জল ওঠে না। সজলধারা প্রকল্পের পাইপ লাইনের সংযোগ তাঁদের আদিবাসী পাড়ার  বাড়ি বাড়ি দেওয়া হলেও তাতে জল  মেলে না । গ্রামের পুকুরও গরমে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে ।শুধু পানীয় জল-ই নয় ।স্নান করা, কাপড় পরিষ্কার করা, শৌচকর্ম করা সমস্ত জলের অভাব রয়েছে এই পাড়ায়।এই পরিস্থিতেতে এখন ডিভিসি ক্যানেলের নিচের সজল ধারার  পাইপ দিয়ে আসা জলই তাঁদের ভরসা”। অপর  মহিলারা বলেন ,তাঁদের পাড়া বাদে অন্য সব গ্রামে সজলধারা প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি তিন বেলা জল দেওয়া হয় । তা থেকে বঞ্চিত রয়েছে সাহেবগঞ্জ হলদি গেরো আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দারা ।এই বিষয়ে তাঁরা এলাকার নেতা নেত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি ও পঞ্চায়েত অফিসেও বহু দরবার করেছিলেন । কিন্তু জল সংকট সমাধানের কোনও ব্যবস্থা আজ অবধি হয়নি । ক্যানেলর আন্ডার পাশের পাইপ লাইন থেকে জল সংগ্রহে আসা লক্ষী মাড্ডি সহ অন্য সকল মহিলারা এক শুরে এদিন জানিয়ে দিলেন ,“প্রশাসন জল সংকট থেকে তাঁদের নিস্কৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করলে তবেই তাঁরা ভোট দিতে যাবেন ।নয়তো তাঁরা  ৭০ ঘর আদিবাসী পরিবারের ২০০ মহিলার কেউই  ভোট দিতে যাবেন না“ । 


জল সংকটের সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হলদি গোরে আদিবাসী পাড়ার পুরুষরাও । পাড়ার বাসিন্দা রাজু মুর্মু জানান, চরম জল সংকট রয়েছে আমাদের পাড়ায়। সকালবেলা হলেই তাঁদের মাঠে শৌচকর্ম করতে যেতে হয়। কারণ  বাড়িতে শৌচাগার থাকলেও জল নেই। বাড়ির মহিলাদের প্রায় হাফ কিমি দূরে ডিভিসি ক্যানেলের আন্ডার পাশের নিচের সজলধারার পাইপ লাইন থেকে জল বয়ে নিয়ে আসতে হয় 
প্রতিদিন । জল নিয়ে নিত্যদিনই পাড়ার কোনও না কোনও পরিবারে অশান্তি লেগে আছে । রাজু মুর্মু জানান , সম্প্রতি  জল নিয়ে স্বামী ও স্ত্রী মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠায় তাঁদের গ্রামের এক বধূ রেগে স্বামীর ঘর ছড়ে ছেলে পুলেকে সঙ্গে নিয়ে আউশগ্রামে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে ।এইসব  কারণেই আদিবাসী পাড়ার মহিলাদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। 


আদিবাসী মহিলাদের আনা অবিযোগ প্রসঙ্গে 
সাহেবগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চায়না অধিকারী জানান, “ওই গ্রামে প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি সজল ধারা কলেজ ব্যবস্থা করা আছে। তা সত্ত্বেও কেন ওই আদিবাসী পাড়ায় পাইপ লাইনে  জল পৌছায়না  না সে বিষয়ে তিনি  খোঁজ নিয়ে দেখবেন ।দ্রুত যাতে সজলধারার  জল পরিসেবা ওই আদিবাসী পাড়ায় পৌছায় তার ব্যবস্থা করবেন বলে প্রধান আশ্বস্ত করেছেন“ ।

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।